সোয়েব সাঈদ, রামু ::
কক্সবাজারের রামুতে মদ্যপ স্বামীসহ শাশুড় বাড়ির লোকজনের নির্যাতনে ৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধুর মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। মূমূর্ষু অবস্থায় ওই গৃহবধুকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন। এসময় হাসপাতালে মৃতদেহ রেখেই পালিয়ে যান স্বামীসহ শাশুড় বাড়ির লোকজন। বুধবার, ৫ এপ্রিল সকালে রামু উপজেলার চাকমারকুল ইউনিয়নের পূর্ব মোহাম্মদপূরা নয়াপাড়া এলাকায় ঘটে এ নির্যাতনের ঘটনা।
নিহত গৃহবধু রুপিয়া আকতার (২৩) রামু উপজেলার চাকমারকুল ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের পূর্ব মোহাম্মদপুরা নয়াপাড়া এলাকার আলমগীরের স্ত্রী এবং রামু উপজেলার দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নের চরপাড়া এলাকার মৃত খুইল্লা মিয়ার মেয়ে। তবে শাশুড় বাড়ির লোকজনের অভিযোগ- স্বামীর সাথে ঝগড়ার জেরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন রুপিয়া আকতার। সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত শেষে বুধবার, ৫ এপ্রিল রাত ১২ টায় পৈত্রিক নিবাস দক্ষিণ মিঠাছড়ি চরপাড়া এলাকায় ওই গৃহবধুর জানাযা ও দাফন সম্পন্ন করা হয়।
নিহত রুপিয়া আকতারের ভাই রফিক আলম জানান- আগেরদিন (বুধবার) সকালে স্বামী আলমগীর ও শাশুড় বাড়ির সদস্যরা তার বোন (রুপিয়া) কে শারীরিকভাবে মারধর শুরু করে। মারধরের একপর্যায়ে মুখ ও গলা চেপে হত্যার চেষ্টা চালায়। এসময় তার বোন অজ্ঞান হয়ে পড়লে শাশুড় বাড়ির লোকজন তাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করে। এসময় স্বামী আলমগীর ও তার বড় ভাই জাহাঙ্গীর সহ শাশুড় বাড়ির লোকজন মৃতদেহ রেখেই হাসপাতাল থেকে সটকে পড়েন।
তিনি আরও জানান- বুধবার বেলা সাড়ে ১২ টায় স্বামী আলমগীর তাকে ফোন করে জানায়- রুপিয়া অসুস্থ তাকে কক্সবাজার সদর হাতপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। খবর পেয়ে দুপুরে তিনি (রফিক) সহ পরিবারের সদস্যরা কক্সবাজার সদর হাসপাতালে গিয়ে কোথাও বোনকে খোজে না পেয়ে কর্তব্যরত পুলিশের কাছে বিষয়টি জানতে চান। এসময় রুপন নামের এক পুলিশ সদস্য তাকে জানায়- মর্গে একটি মৃতদেহ রাখা হয়েছে। সেখানে গিয়েই বোনকে শনাক্ত করেন ভাই রফিক আলম।
রফিক আলম আরও জানান- ৫ বছর আগে আলমগীরের সাথে রুপিয়া আকতারের বিয়ে হয়। তাদের সংসারে ৪ বছরের পুত্র সন্তান (আনাছ বিন আলম) রয়েছে। এছাড়া বর্তমানে সে ৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলো। স্বামী আলমগীর নিয়মিত মদ ও গাঁজা সেবন করতো এবং বাড়িতে গিয়ে তার বোনকে কারনে-অকারণে মারধর করতো। মারধর সইতে না পেরে রুপিয়া আকতার পৈতিক বাড়িতে চলে যান। এরই প্রেক্ষিতে ৫ মাস পূর্বে চাকমারকুল ইউনিয়ন পরিষদের লিখিত অভিযোগ দেন তিনি (রফিক)। এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে পরিষদের শালিস বৈঠকের মাধ্যমে নির্যাতন করবেনা মর্মে মুচলেখা দিয়ে রূপিয়া আকতারকে ফের শাশুড় বাড়ির সদস্যদের তুলে দেয়া হয়। কিন্তু এরপরও নির্যাতন বন্ধ হয়নি। সর্বশেষ অমানুষিক নির্যাতনে বোনকে হারাতে হলো। এখন চার বছরের ভাগিনাও মাতৃহীন হয়ে গেলো। পরিকল্পিতভাবে নির্যাতন চালিয়ে তার বোনকে হত্যা করা হয়েছে। এখন আত্মহত্যার নাটক সাজিয়ে আসল ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চলছে।
এদিকে বর্বরোচিত এ হত্যাকান্ডের বিচার দাবি করে রফিক আলম জানান- মৃত্যুর পর বোনের মুখে কয়েকটি জখমের চিহ্ন ছিলো। মাথার চুলও উপড়ে ফেলা হয়েছে। গলায়ও ছিলো শ্বাসরোধ করে হত্যার চিহ্ন। এ নিয়ে পুলিশের কাছে তিনি সুরতহাল প্রতিবেদন চেয়েও পাননি। পরে মামলা করার জন্য তিনি রামু থানা পুলিশের কাছে গেলে ওসি আনোয়ারুল হোসাইন তাদের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলে মামলা করার পরামর্শ দেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রামু থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আনোয়ারুল হোসাইন জানান- গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে। নিহতের সুরতহাল প্রতিবেদন ও ময়নাতদন্তও হয়েছে কক্সবাজার মডেল থানার মাধ্যমে। এটার আইনী প্রক্রিয়া হলো- ওই থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হবে। পরে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে আঘাতজনিত মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হলে রামু থানাকে জানাবে। তখনই রামু থানায় হত্যার অভিযোগে মামলা রুজু করা হবে। এমনকি বাদি না চাইলেও মামলা হবে। তাই এখন ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মঈন উদ্দিন জানান- আলমগীর ইতিপূর্বে আরও একটি বিয়ে করেন এবং ২ মেয়ে সন্তান থাকা সত্তে¡ও বনিবনা না হওয়ায় প্রথম স্ত্রীকে ডিভোর্স দিয়ে রুপিয়া আকতারকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। বিয়ের পর থেকে আগের ২ মেয়েকে দেখাশোনা না করা সহ বিভিন্ন বিষয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ লেগে থাকতো। ঘটনার দিন (বুধবার) সকাল সাড়ে আটটার দিকে আলমগীর স্ত্রীকে মারধর করে ৪ বছরের ছেলে সন্তানকে পাশর্^বর্তী দোকানে চলে যান। পরে বাড়িতে গিয়ে জানতে পারেন স্ত্রী রুপিয়া আকতার অভিমানে আত্মহত্যা করেছে।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত আলমগীরের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করে সংযোগ বন্ধ পাওয়া গেছে। এছাড়া অপর অভিযুক্ত জাহাঙ্গীরের (আলমগীরের বড় ভাই) মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। এ কারণে অভিযুক্ত কারও বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
পাঠকের মতামত: